অনুভূতি চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ে লেখা হয় কবিতা
নৈকট্য
আমি একেবারে তোমাদের বিপরীতেই বাস করি, কাছাকাছি
তাই, তুমি উজ্জ্বল, আমি উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণ
তুমি ঘুমাতে যাও তখন যখন আমরা জেগে কাজ করি
এবং আমরা যখন কাজে যাই তোমরা তখন বিছানায়
আমি তোমার ঠিক বিপরীতে বাস করি, প্রিয়
ঠিক পৃথিবীর উল্টো দিকে, পাশের বাসায়
তাই তুমি বলো সুভ রাত্রী
আমি শুনি গুড মর্নিং
স্বপ্ন বোনা
কে বলে মৃত্যু মানে স্থান ছেড়ে চলে যাওয়া
মৃত্যু মানে কাজ ফেলে রেখে সরে পড়া
জীবন মানে শুধু নিঃশ্বাস নেওয়া নয়
পৃথিবীর কিছুটা দায়িত্ব তুলে নেওয়া নিজ ঘাড়ে
এবং মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে জেগে জেগে
স্বপ্ন বোনা দিনে এবং রাতে।
আকাশে মেঘতো আছে
বুনো হাঁসে আর ঘাসে এত মেল মেশ
দেখেছি আজ ভোরের কালো রোদ্দুরে
সূর্য এখন মেঘে চড়ে, আড়াল করে মুখ
ঝর ঝর ঝর কাঁদবে এবার, কখন কে জানে
ঘ্রাণ উঠেছে হাওয়ার তালে, ভাসে সে বারতা
নিশিথিনী, দেহপসারিনী মেয়ে, ঘুমোয় ঘরে ফিরে
ও ইট ভাঙ্গানী মা, যেও না কোথাও ঘরে দুয়োর দিয়ে রাখো
আজ উপোশ দিয়ে থাকো, বুকের দুধ খাওয়া ছেলেটাকে
চোখ রাঙ্গিয়ে রাখো, আজ বৃষ্টি হলে হোক না ভীষন
হোক না তুমুল ঝড়
বুনো ঘাসে আর হাঁসের ডানায় ডানায়
উষা, লুইস গ্লিক
(২০২০-এ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী কবি)
১.
অন্ধকার ঘরে ছেলে জেগে ওঠে
চিৎকার করে কাঁদে, হাঁস ফিরিয়ে দাও, হাঁস ফিরিয়ে দাও
এমনই সে ভাষা আগা মাথা তার কেউ বোঝে না আশে পাশে
কোনো হাঁস নেই সেথায়
বরং একটা কুকুর, ধবধবে সাদা
শুয়ে কাছা-কাছে জড় সড় নিজ খাবারের গামলায়
বছরে বছরে বছর গেলো – অনেক বছর চলে।
সবটাই স্বপ্ন। তবে হাঁসটা –
কেউ জানে না তার কোথায় কী হলো।
২.
ছলেটার সাথে পরিচয় এইতো, এখনই
ওরা শুয়ে থাকে এক খোলা জানালার পাশে
কিছুটা তাদের ডেকে তোলবার জন্যে, নিশ্চিত করা
যে রাতের যা যা তাদের মনে পড়ে তার সবটুকুই ঠিক,
এখন আলো ঢুকতে চায় ঘরে,
তাছাড়াও ওদের দেখানো দরকার কীভাবে কী হলো:
নোংরা গদির নীচে অর্ধেক উকি মারা পায়ের মোজা,
সবুজ পাতায় সাজানো লেপ –
সূর্যালোকে উজ্জ্বল
সে সব তবে বাকি রয়ে গেছে আরো,
সীমানার ভাগ, নিশ্চিত, গায়ের জোরে নয়,
তারপর সুদীর্ঘ, বর্ণন
প্রতিটা চুলচেরা
রূচিবাগীশ, স্যাহিত্যের নির্মান,
বাদ পড়ে না চাদরে পড়ে থাকা তিল পরিমান রক্ত।
৩.
পরে, সারা দিনের জন্যে তারা দূরে সরে গেলো
তাও পরে, ডেস্কে, বাজারের ভেতর,
ছেলেটার দেওয়া সংখ্যায় ম্যানেজার মোটেই খুশি নন
নীচের স্তরে সব ছাতনা ধরা ফল-
ফলে একজন অপসৃত হয় পৃথিবী থেকে
এমনকি যেন একজন তাতে প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে পারে –
বাড়ি ফিরে এসে, যখন তুমি দেখতে পেলে সেই ছাতা
ততক্ষণে সব শেষ, ভিন্ন কথায়
যেন সূর্য তোমায় অন্ধ করে রেখেছে মুহূর্তখানেক।
সেলিয়া, সেলিয়া / অ্যাড্রিয়ান মিচেল
যখন হয়ে পড়ি জর্জরিত হতাশ ক্লান্ত
মনে হয় সব শেষ, রণ ক্লান্ত আমি ক্ষান্ত
পথে পথে ঘুরি ফিরি সারাক্ষণ অশান্ত
কেবল তোমাকেই ভাবি, নগ্ন একান্ত
পঙ্খীরাজ ঘোড়া
রাজার রাজ্যে ঘোড়ার কারবার বেশী
তরবারি আর গাদা বন্দুক
কামান হাতী ও বজরা
তারো আগে
রথ তীর-ধনুক গদা
সবার আগে রুপকথার পঙ্খীরাজ
আজো মাঝে মাঝে ঘুম না এলে
জেগে বসে খুঁজে ফিরি
সেই পঙ্খীরাজ ঘোড়া
তেসরা ডিসেম্বর ২০২০
শেষ অভিসার
না যদি চুপিসারে থাকেই প্রেম আজো
হিয়ায় কেন ওঠে ঝড় কাল বোশেখীর মতো
দক্ষিণ দুয়ারে কেন সে দেয় টোকা, সংগোপনে?
তোমার প্রিয় হাতের ঘড়ি, আমার প্রিয়
মাতাল করা তোমার গায়ের রং; প্রেমের শেষ অভিসারে
রই রিক্সায় বেশ কিছুক্ষণ।
প্রেরণা তোমার কাছেই পাওয়া
মেরে হৃদয় বাঁচাই জীবন।
১৬ই ডিসেম্বর ২০২০
০২| তবে যদি কথা দাও রাজা হবে আমারই সন্তান:
ততদিনে গঙ্গা গিয়েছেন ফিরে চলে স্বর্গে, তিন যুগ সেথা লালিত হয়ে দেবব্রত
এসেছেন পিতা শান্তনুর কাছে। রাজা শান্তনু এবার যমুনার তীরে
প্রেমের লীপ্সায় কামনা করলেন মৎসগন্ধা নারী সত্যবতীকে
এবং আবারো, নীলনক্সা এটে মগজে নারী দিলেন এক শর্ত
‘শোন রাজা, তোমার পরে রাজা হবে মোর গর্ভের পুত্র,‘
পিতার বাসনা করতে পূর্ণ, ভারি প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হয় দেবব্রত
নিজে হলো ভীষ্ম, রইবেন চিরকুমার, নারী বির্বজিত পুরুষ জীবন
আনন্দে আক্ষেপে করুণায় হরষে পিতা সে জীবন
করে দিলেন দীর্ঘ, ইচ্ছে মৃত্যুর বর দিয়ে
মহাভারতের কথা অমৃত সমান
০১| ভাল যদি বাসো তবে শোনো:
আমি যে কে, কখনো তা চেয়ো না জানিতে
আমি যা-না করি কেনো, বুঝিতে যেও না তার মর্ম
আমি স্বাধীন, তোমার বুকের মাঝে সাঁতার কাটছি তাই
আজ, তুমি হলে আমার হৃদয়ের স্বামী, মহরাজ।
কয়েক পুরুষ ধরে পুরুষে পুরুষে আজো
নারীর সে কথা রেখে চলেছে,
রা করে নি কভু
নারীর মাথায় নীলনকশা
রাজার বুকে কাম
মহাভারতের কথা অমৃত সমান